বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধনকে স্বাগত জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এক বার্তায় স্বাগত জানায়।
বার্তায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রম মান উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকারকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানায়। এই সংশোধন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক ও ব্যবসার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার যাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমরা আশা করি, আগামী নির্বাচিত সংসদ দ্রুতই এই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করবে।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে সরকার। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংশোধনের বিষয়টি নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানে ২০ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক থাকলে ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে ২০ জনের সম্মতি লাগবে। এ ছাড়া ৩০১ থেকে ৫০০ শ্রমিক রয়েছে— এমন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৪০ জন, ৫০১ থেকে ১ হাজার ৫০০ শ্রমিকের প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন, ১ হাজার ৫০১ থেকে ৩ হাজার শ্রমিকের কারখানায় ৩০০ জন এবং ৩ হাজার ১ থেকে তার বেশি শ্রমিক থাকলে ৪০০ জনের সম্মতি লাগবে। একটি প্রতিষ্ঠানে ৫টির বেশি ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে না। এত দিন সর্বোচ্চ তিনটি করা যেত।
সাধারণত মজুরি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন শ্রমিকেরা। তাদের আন্দোলন ঠেকাতে শিল্পমালিকেরা অনেক সময় শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি তাদের কালোতালিকাভুক্ত করেন। তখন শ্রমিকদের নতুন কারখানায় চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। সংশোধিত শ্রম আইন অধ্যাদেশে শ্রমিকদের কালোতালিকাভুক্ত করার বিষয়টি নিষেধ করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো শ্রমিক বা ইউনিয়নের কোনো সদস্যকে কোনো কারণে চাকরির অবসান হলে কালোতালিকাভুক্ত করে নোটিশ জারি বা তথ্যভান্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এ ছাড়া মালিক বা মালিকদের সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে শ্রমিক সংগঠন প্রতিষ্ঠাকে উদ্বুদ্ধ করা যাবে না। পক্ষপাতমূলকভাবে বিদ্যমান ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত এবং অন্য ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করা যাবে না।
এতদিন শ্রম আইনে শ্রমিকদের সুবিধার জন্য ভবিষ্য তহবিল গঠনের কথা বলা থাকলেও তা বাধ্যতামূলক ছিল না। তবে এবার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ১০০ স্থায়ী শ্রমিক থাকলেই মালিকপক্ষকে শ্রমিকের জন্য ভবিষ্য তহবিল গঠন করতে হবে। তবে বিকল্প ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে।
কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রগতিতে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে ভবিষ্য তহবিল করা থেকে অব্যাহতি পাবে মালিকপক্ষ। এই স্কিমে মালিক ৫০ শতাংশ ও শ্রমিক ৫০ শতাংশ চাঁদা দেবেন। তবে কোনো সদস্য স্কিমে থাকতে না চাইলে লিখিতভাবে মালিকপক্ষকে জানাতে হবে। সে ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের ৫০ শতাংশ চাঁদা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

