ফিলিস্তিনি এতিম শিশু ইলিন: মাস্তুলের হাত ধরে স্বপ্ন বাঁচানোর লড়াই।

Date:

- Advertisement -

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় অসহায়ত্ব ও বেদনার এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে ১১ বছর বয়সী এতিম মেয়ে ইলিন। মাস্তুল ফাউন্ডেশন এই শোকাহত শিশুর পাশে দাঁড়িয়েছে, যা তাদের গাজায় চলমান ব্যাপক মানবিক সহায়তারই একটি অংশ। শুধুমাত্র জরুরি ত্রাণ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে গাজার শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে মাস্তুল ফাউন্ডেশন তাদের অঙ্গীকারবদ্ধতা নিশ্চিত করছে।

​গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা ইলিনের জীবন ছিল প্রাচুর্যময়। তিনতলা বাড়িতে বাবা-মা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজন নিয়ে ছিল এক সুখের সংসার। কিন্তু এক ভয়াবহ বোমা হামলায় সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। বিকট বিস্ফোরণে বাড়িটি পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। সেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ইলিনের বাবা-মা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনসহ প্রায় ১২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।

​অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেলেও ইলিনের শরীর জুড়ে রয়ে গেছে ভয়াবহ ক্ষতের চিহ্ন। পুরো শরীর আগুনে ঝলসে গেছে, মাথায় ও হাত-পায়ে মারাত্মক আঘাত। নিজের ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে ইলিন বেদনাহত কণ্ঠে জানায়, “আমার ক্ষতচিহ্নগুলো বিশ্ববাসীকে দেখতে হবে, জানতে হবে, কারণ গাজার হাজারো শিশু এভাবেই কষ্ট পাচ্ছে।” চিকিৎসার অভাবে গাজায় তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তার ফুপু তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন মিশরের কায়রোতে। সেখানেও চিকিৎসার অপ্রতুলতা ও আর্থিক সংকটে অনিশ্চয়তায় কাটছে তাদের দিন।

​ইলিনের হৃদয়বিদারক প্রশ্ন, “আমার কী দোষ ছিল? আমি তো ইহুদিদের কোনো ক্ষতি করিনি। কেন আমার জীবনটা এভাবে ভেঙে গেল?” তার শৈশবের হাসি-খুশি আজ ম্লান। বন্ধুরা তার ক্ষত দেখে দূরে সরে যাওয়ায় সে এখন নিজেকে সমাজের বোঝা মনে করে। তবে সকল কষ্টের মাঝেও তার চোখে এখনও স্বপ্নের ঝিলিক— সে আবার পড়া শোনায় ফিরতে চায়, সাংবাদিক হতে চায়, যেন গাজার সত্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে পারে।

​ইলিন আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে, “বাংলাদেশবাসী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, এজন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, ভবিষ্যতেও আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন।”

*মাস্তুল ফাউন্ডেশনের মানবিক অঙ্গীকার ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা*

​মাস্তুল ফাউন্ডেশন শুধু ইলিন নয়, তার মতো হাজারো আহত ও এতিম শিশুর পাশে থাকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিশরের কায়রোতে তাদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে তাদের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা চলছে।

​মাস্তুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমান বলেন, “গাজার প্রতিটি শিশু আমাদের সন্তান। তাদের কষ্ট দেখে আমরা নিরব থাকতে পারি না। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের পক্ষ থেকে আমরা গাজার শিশুদের পাশে থাকব, ইনশাআল্লাহ। আমাদের সহায়তা জরুরি ত্রাণে সীমাবদ্ধ নয়, আমরা তাদের জন্য একটি নতুন ও সুন্দর ভবিষ্যতের বীজ বপন করতে চাই।”

​গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত স্বনামধন্য মাস্তুল ফাউন্ডেশন বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ও শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে।
​তাদের উল্লেখযোগ্য মানবিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে: করোনা মহামারির সময় দাফন সেবা, ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় জরুরি ত্রাণ বিতরণ, এবং ২০২৩ সালের তুরস্কের ভূমিকম্পে মানবিক সহায়তা প্রদান।

​এছাড়াও, তাদের সফল প্রকল্প “যাকাত স্বাবলম্বী”-এর মাধ্যমে অসংখ্য অসহায় ব্যক্তি ও যুব সমাজের জন্য স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। তারা প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে বিনামূল্যে একবেলার খাবার বিতরণ করে। ঢাকার হাজারীবাগ বারইখালি এলাকায় মাস্তুল ফাউন্ডেশনের নিজস্ব মাদ্রাসা, সেল্টারহোম, এতিমখানা ও মেহমানখানা রয়েছে।

- Advertisement -

Subscribe

সর্বাধিক পঠিত

আরও
Related

মেট্রোরেল যাত্রীদের জন্য বড় সুখবর

ঢাকা মেট্রোরেলে চলাচল করা যাত্রীদের বড় সুখবর দিয়েছে ঢাকা...

আর্মি সার্ভিস ও মেডিক্যাল কোরের রিক্রুট ব্যাচের-২০২৫ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি সার্ভিস কোরের রিক্রুট ব্যাচ ২০২৫-এর সেনাবাহিনী...

চাকসুতে ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (চাকসু) ও হল...

আমি নিজেই পিআর বুঝি না: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিআর আমি...