কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি তুলা হয়েছে, তা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে মূলত বাহিরচর গ্রামের দিপালী বালার প্রতিবেশীরা করেছে বলে জানা গেছে। তবে তাদেরকে এখনো সনাক্ত করা ও পরিচয় জানা যায়নি। ভিডিওটি যারা করেছে তাদের অনেকেই হিন্দুদের বিভিন্ন গ্রুপের সাথে যুক্ত ছিল এবং ভিডিওটি বিভিন্ন গ্রুপে দেওয়ার ফলে ভাইরাল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে রোববার (২৯ জুন) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, মুরাদনগরে জঘন্য অপকর্ম করেছে আওয়ামী লীগের একজন নেতা। অথচ সেটা আমাদের দলের নামে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যে অপকর্মটি করা হয়েছে, আমার বলতেও সেটা ঘৃণা লাগছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, কিন্তু তাদের দোসররা বসে নেই। তারা নানাভাবে অপকর্ম করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কঠোর না হওয়ায় এসব ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দ্রুত দৃশ্যমান করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণকাণ্ডের মূল রহস্য ধীরে ধীরে উদঘাটিত হচ্ছে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে। রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সুমনের নেতৃত্বে নারীকে ওইদিন বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করা হয়। স্থানীয় লোকজন, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের ওই নারীর স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী। তার সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল স্থানীয় যুবক ফজর আলীর। সেই সূত্র ধরে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করেন ফজর আলী। তাকে ধরতে ছাত্রলীগ নেতা সুমনের নেতৃত্বে কয়েকজন ফাঁদ পাতে। পরে পরিকল্পনামাফিক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও করে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, এটা স্রেফ একটা পরকীয়ার ঘটনা। ফজর আলীর সঙ্গে ওই নারীর দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক চলছিল। বৃহস্পতিবার ফজর আলী ওই বাড়ির দিকে রওনা করলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে হাতেনাতে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে। এ সময় ফজর আলী ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করলে ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনসহ তার সঙ্গীরা তাদেরকে হাতেনাতে আটক করে। প্রথমে ফজর আলীকে বেধড়ক পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়। এসময় ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে পরিকল্পিতভাবে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল করিম বলেন, আমরা আগে থেকেই জানি ফজর আলীর সঙ্গে ওই নারীর পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি সেদিন রাতে মূলত ফজর আলী এবং ওই নারী পারস্পরিক সম্মতিতে ওই ঘরে ছিলে। কিন্তু তাদেরকে হাতেনাতে ধরার জন্য নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সুমন ফাঁদ পেতে থাকে। তার সঙ্গে আরো ১০-১২ জন নেতাকর্মী ছিল। পরিকল্পিতভাবে ওই নারীকে বিবস্ত্র করা, নির্যাতন করা সব কিছুর নেপথ্যের নায়ক ছাত্রলীগ সভাপতি সুমন। আমরা শুনেছি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। তার নেতৃত্বে যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তাদের শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে সুমন রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। সুমন বাহেরচর গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে। আমরা তার রাজনৈতিক পরিচয় এবং স্থানীয়ভাবে তার কর্মকাণ্ড যাচাই-বাছাই করেছি। মূলত ছাত্রলীগ সভাপতি সুমনের নেতৃত্বে ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। আমরা গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছি। ঘটনার নেপথ্যের কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। স্থানীয়রা বলছেন, পরকীয়া কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আরও অনেক তদন্ত করা দরকার। তদন্তের পরই সব কিছু বেরিয়ে আসবে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, আমরা অভিযুক্ত ধর্ষক ফজর আলীসহ ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছি। এ ঘটনায় যারাই জড়িত রয়েছে প্রত্যেককে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমাদের গোয়েন্দা টিম এবং তদন্ত টিম মাঠে কাজ করছে। এমন পৈশাচিক ঘটনার নেপথ্যে যারাই জড়িত রয়েছে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।