তাপজনিত রোগে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৩৩ কোটি থেকে ১৭৮ কোটি ডলার। যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১৫ হাজার ৯৬০ কোটি থেকে ২১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। এটি ওই বছরের মোট জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদ) শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম তাপের তুলনায় যখন তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায় সেসময় শ্রমজীবী মানুষের উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়।
বিশ্বব্যাংকের ‘এ্যান আনসাসটেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রকাশ করে সংস্থাটি।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য) ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
বিশ্বব্যাংকের ডিভিশনাল ডিরেক্টর জেন পেসমির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন অফিসার ইফফাত মাহমুদ এবং হেলথ স্পেশালিস্ট ওমিকিউ এ. রাজা।
প্রতিবেদেন বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০৮০ সাল থেকে ২৯২৩ সাল পর্যন্ত সারা দেশে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি। তবে ঢাকায় সেটি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তাপ বৃদ্ধিজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি কাশিজনিত সমস্যা। শীতকালে যেখানে এমন কাশিতে আক্রান্তের হার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, গ্রীষ্মকালে সেটি বেড়ে হয় ৬ শতাংশ। এছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ২ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ মনে করে তাপজনিত কারণে তারা ক্লান্ত ছিলেন। ৩৬ থেকে ৬৫ বছর বয়সি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মানুষের ক্লান্তি সবচেয়ে বেশি। তবে ৬৬ বছর বয়সি মানুষের তাপজনিত ক্লান্তি সবচেয়ে বেশি।
এছাড়া ডায়রিয়া রোগের হার ঋতুভেদে ব্যাপক পরিবর্তিত হয়। গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার হার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। শীতকালে এই হার থাকে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। এই রোগে সবেচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় নারী ও ৫ বছরের কম বয়সি শিশুরা। এছাড়া তাপবৃদ্ধি মানসিক সমস্যাও তৈরি করে। শীতে যেখানে বিষন্নতায় ভোগার হার ১৬ দশমিমক ২ শতাংশ, সেখানে গ্রীষ্মে বেড়ে দাঁড়ায় ২০ শতাংশে।
প্রতিবেদনে দেওয়া সুপারিশে বলা হয়েছে, তাপপ্রবাহ আরও ভালোভাবে মোকাবিলার জন্য জাতীয় প্রস্তুতির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। সেটি করতে হবে বহুপাক্ষিক সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে। এছাড়া উচ্চ তাপমাত্রাজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা প্রাণহানি রোধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে। তাপের প্রবাহ থেকে স্বাস্থ্য রক্ষায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সঠিক ও বিস্তারিত আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব কমাতে আন্তর্জাতিক সহযোগীতা ও অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, মন্ত্রী-এমপিদের প্লট দিতে গিয়ে রাজউক যা ক্ষতি করার করেছে। এখন এসব বন্ধ করে ক্ষতি পোষানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সবুজ ধ্বংস করে রাজউকের আবাসিক প্রকল্প করা যাবে না। সেই সঙ্গে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত গেলে দেখা যায় ধান ক্ষেতে হাজার হাজার আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড। এগুলো কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না, তা ভেবে দেখতে হবে। সঠিকভাবে ড্যাপ তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। ঢাকাকে ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে না দিয়ে নগরবাসীর হাতে দিতে হবে। জনগণেরও দায়বদ্ধতা আছে। আইন মানতে হবে। সেই সঙ্গে ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য) ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, তাপমাত্রাজনিত স্বাস্থ্য ক্ষতি কমাতে আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উদ্যোগ থাকতে হবে।