ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তান সফলভাবে ৪৫০ কিলোমিটার পাল্লার একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটি। ‘আব্দালি উইপন সিস্টেম’ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্র ‘সিন্ধু মহড়া’র অংশ হিসেবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। খবর এনডিটিভির।
কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা তীব্রতর হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাকে একটি ‘গুরুতর উসকানি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সরকারি সূত্র।
এদিকে এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকার বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ছিল সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি যাচাই এবং ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত ন্যাভিগেশন সিস্টেম ও গতিশীলতা পরীক্ষা করা।
এতে আরও বলা হয়, এর সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন।
তবে ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান নিয়মিতভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই পাকিস্তানি নেতাদের উস্কানিমূলক বক্তব্য বেড়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ ২৯ এপ্রিল দাবি করেছিলেন, ভারত ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারে। যদিও সেই সময়সীমা অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। একই দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীও বলেছিলেন, ‘যদি কিছু ঘটার থাকে, তা ২-৩ দিনের মধ্যেই ঘটবে।’
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র বৈসারণ উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হন। যাদের মধ্যে ছিলেন একজন নেপালি পর্যটক ও একজন স্থানীয় ঘোড়সওয়ার।
ওই ঘটনার একদিন পর (২৩ এপ্রিল) ভারত একতরফাভাবে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত গুরুত্বপূর্ণ পানি বণ্টন চুক্তি বা সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে।
আর এর পরদিনই অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল পাকিস্তান পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায় যে, তারা ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি কার্যকরভাবে স্থগিত করতে পারে এবং ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিতে পারে।
ভারত দাবি করেছে, ২২ এপ্রিলের ওই হামলার সঙ্গে সীমান্ত পারের অর্থাৎ পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে কোনো দৃঢ় প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।
বিপরীতে, পাকিস্তান এ অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এ ঘটনার স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, যাতে সত্য উদ্ঘাটন হয়।
এসব ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পাশাপাশি সামরিক প্রস্তুতিও বাড়ছে। তারই মধ্যে পাকিস্তানের এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।