সাবেক রাষ্ট্রপতি, স্বাধীনতার ঘোষক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের এই দিনে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নির্মমভাবে শহীদ হন তিনি। ক্ষণজন্মা এই পুরুষ আর কিছু দিন সময় পেলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেত বলে মনে করেন তার সহযোদ্ধারা।
২৬ মার্চ জিয়ার কণ্ঠ শুনে দিগভ্রান্ত ও অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো মা ও মাটির সুরক্ষায়। সেই থেকে শুরু; ইতিহাসের নানা বাঁকে, নানানভাবে দেশকে তিনি দিয়েই গেছেন শুধু। বিনিময়ে নিয়েছেন কেবল মানুষের ভালোবাসা।
জিয়াউর রহমানের জন্ম ১৯৩৬ এর ১৯ জানুয়ারি। বগুড়ার বাগবাড়ীর মণ্ডলবাড়ীতে মনসুর রহমান ও জাহানারা খাতুনের সংসার আলো করে জন্ম নেন তিনি। লেখাপড়ায় মেধাবী জিয়া কর্মজীবনে চৌকস সেনা কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে নিজস্ব ক্যারিশমায় জিয়াউর রহমান গড়েছেন নতুন ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান আর্মির সঙ্গে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে হাজির হয়েছেন জাতির ত্রাতা হিসেবে।
বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির আভাস দিয়ে বলেছিলেন, রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতিকে কঠিন করে তোলার কথা। অর্থাৎ, শুধু কথার ফুলঝুরি নয় মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে হবে।
১৯ দফার মাধ্যমে দেশকে আর্থ-সামাজিক ভিত্তির ওপর শক্ত অবস্থানে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন জিয়া। স্বনির্ভর হতে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করায় সফল হন এই রাখাল রাজা। যার ফলে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ কবলিত বাংলাদেশ তার সময়ে উদ্বৃত্ত খাদ্য রপ্তানির সক্ষমতা অর্জন করে।
১৯৭৭ থেকে ৮১। চার বছরেরও কম সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন অনেকটুকু। সহযোদ্ধা আজও তার অভাব অনুভব করেন।
জনতার নেতা জিয়া, দেশি-বিদেশি চক্রান্তে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নির্মমভাবে নিহত হন। থমকে যায় গোটা দেশ, থমকে যায় দেশের অগ্রগতি। গত দেড় দশক জিয়া চর্চা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল আওয়ামী ফ্যাসিবাদ। তবু, প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে কর্মগুণে চিরঅম্লান ও চিরঞ্জীব হয়ে আছেন শহীদ জিয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চ নিজের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। তখন কোনো রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তার দেখা হয়নি, কথাও হয়নি, এমনকি পরামর্শও হয়নি। এসব ছাড়াই তার এ ঘোষণাই প্রমাণ করে যে তিনি কী পরিমাণ সাহস ছিলেন।
জিয়াউর রহমানের রাজনীতি প্রসঙ্গে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সেই সময় একটা রেওয়াজ ছিল, যে ভালো বক্তব্য দিতে পারেন তিনিই বড় নেতা। অথচ জিয়াউর রহমান এই রাজনীতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি উন্নয়ন ভিত্তিক, কর্ম ভিত্তিক, ন্যায় ভিত্তিক রাজনীতি করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন করার জন্য বিপ্লব সাধন করেছেন।
জিয়া তার শাসনামলে কয়েকটি নজির রেখে গেছেন দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ১৯৭৪ সালে এ দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে অথচ তিন বছরের মাথায় সেই দেশ থেকে জিয়া চাল রপ্তানি করতে সক্ষম হয়ে ছিলেন।
অপর দিকে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহ করার সিদ্ধান্ত নেই আমরা, তখনি জিয়ার সঙ্গে আমার সখ্যতা গড়ে ওঠে। বিদ্রোহ ঘোষণার পর এ সম্পর্ক ভাইয়ের দিকে গড়ায়।
যুদ্ধের ময়দানের সহকর্মী অলি আহমদ মেজর জিয়ার স্মৃতিচারণ করে বলেন, জাতীকে যে ভাবে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে নিয়েছিলেন আজ তিনি বেঁচে থাকলে দেশ অনেক কিছু পেত তার কাছ থেকে।